Skip to content

নারী ও শিশু

নারী ও শিশু: সমাজের ভিত্তি ও ভবিষ্যৎ

নারী ও শিশু একটি সমাজের দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। নারীরা সমাজের স্রষ্টা ও সংরক্ষক হিসেবে কাজ করেন, যখন শিশুরা তার ভবিষ্যৎ প্রতিনিধিত্ব করে। তাদের কল্যাণ ও অধিকার নিশ্চিত করা কেবল নৈতিক দায়িত্ব নয়, বরং একটি সমৃদ্ধ ও সুস্থ সমাজ গড়ার পূর্বশর্ত। এই প্রবন্ধে আমরা নারী ও শিশুদের জীবনে চ্যালেঞ্জ, তাদের উন্নয়নে সমাজের ভূমিকা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করব।

নারী ও শিশুদের জীবনে চ্যালেঞ্জ

নারী ও শিশুরা প্রায়শই সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক বৈষম্যের শিকার হয়। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ এলাকায় নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ এখনও সীমিত। বাল্যবিবাহ, গার্হস্থ্য হিংসা এবং পুষ্টিহীনতা নারীদের জীবনকে কঠিন করে তোলে। অন্যদিকে, শিশুরা অপুষ্টি, শিক্ষার অভাব এবং শিশুশ্রমের মতো সমস্যার সম্মুখীন হয়। জাতিসংঘের শিশু তহবিল (UNICEF) অনুসারে, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় ৩৫% শিশু পুষ্টিহীনতায় ভুগছে, যার বড় অংশ বাংলাভাষী অঞ্চল থেকে।

সমাজে নারী ও শিশুদের ভূমিকা

নারীরা পরিবার ও সমাজের কেন্দ্রবিন্দু। তারা শিশুদের প্রথম শিক্ষক হিসেবে তাদের মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি শেখান। গবেষণায় দেখা গেছে, শিক্ষিত মায়ের সন্তানরা স্বাস্থ্য ও শিক্ষার দিক থেকে বেশি উন্নত হয়। শিশুরা, অন্যদিকে, সমাজের ভবিষ্যৎ নির্মাতা। তাদের সঠিক লালন-পালন ও শিক্ষা সমাজের অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য। উদাহরণস্বরূপ, বাংলার ইতিহাসে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নারী শিক্ষার পক্ষে কাজ করেছেন, যা আজও আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়।

উন্নয়নে সমাজ ও সরকারের ভূমিকা

নারী ও শিশুদের উন্নতির জন্য সমাজ ও সরকারের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারি নীতি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প এবং ভারতে ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ প্রকল্প নারী শিক্ষা ও ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। শিশুদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা ও টিকাদান কর্মসূচি তাদের জীবনমান উন্নত করেছে। তবে, এই প্রকল্পগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন এবং সচেতনতা বৃদ্ধি এখনও একটি চ্যালেঞ্জ।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

নারী ও শিশুদের কল্যাণে বিনিয়োগ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করে। প্রযুক্তির ব্যবহার, যেমন অনলাইন শিক্ষা এবং টেলিমেডিসিন, গ্রামীণ নারী ও শিশুদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। এছাড়া, নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য ক্ষুদ্রঋণ এবং দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ অত্যন্ত কার্যকর। শিশুদের জন্য বিজ্ঞান ও সৃজনশীলতামূলক শিক্ষার ওপর জোর দিলে তারা ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে।

উপসংহার

নারী ও শিশুরা সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের প্রতি অবহেলা সমাজের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে। বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলে তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অধিকার নিশ্চিত করা আমাদের সম্মিলিত দায়িত্ব। যদি আমরা তাদের সঠিক যত্ন ও সুযোগ দিতে পারি, তবে একটি সমতাভিত্তিক ও সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।


তথ্যসূত্র

  1. ইউনিসেফ. (2023). “দক্ষিণ এশিয়ায় শিশুদের পুষ্টি ও স্বাস্থ্য।” উপলব্ধ: https://www.unicef.org/
  2. হোসেন, রোকেয়া সাখাওয়াত. (1905). সুলতানার স্বপ্ন. কলকাতা: প্রকাশক অজানা।

Subscribe
Notify of
guest
2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Tapan Kumar Saha
Tapan Kumar Saha
1 month ago

নারী ও শিশু নিয়ে লেখক এর লেখা পড়ে আমি মুগ্ধ। কারণ,বাংলাদেশের নারী ও শিশুরা অনেক অবহেলিত। কিছু শিশু তো লেখাপড়ার গুন্ডি থেকে খুব সহজেই ঝরে পড়ে আবার কিছু নারী এরমধ্যে আছে যেমন, তৃতীয় লিঙ্গ এদের নিয়ে আমাদের আরো বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা প্রয়োজন এদের জন্য আমরা কি করতে পারি অন্তরে আমরা সংগঠনই বা আমরা কতটুকু কাজে লাগতে পারি এবং নিত্যনতুন প্রকল্প হাতে নিয়ে আমাদের নারী ও শিশু কিভাবে ঝরে পড়া রোধ করতে পারি এবং অবহেলিত নারীদেরকে নিয়ে উন্নত থেকে উন্নতর করতে পারি সেজন্য অন্তরে আমরা ফাউন্ডেশন এর সকল সদস্যদের উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

Tapan Kumar Saha
Tapan Kumar Saha
1 month ago

“নারী ও শিশু” নিয়ে লেখক এর লেখা পড়ে আমি মুগ্ধ। কারণ,বাংলাদেশের নারী ও শিশুরা অনেক অবহেলিত। কিছু শিশু তো লেখাপড়ার গুন্ডি থেকে খুব সহজেই ঝরে পড়ে আবার কিছু নারী এরমধ্যে আছে যেমন, তৃতীয় লিঙ্গ এদের নিয়ে আমাদের আরো বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা প্রয়োজন এদের জন্য আমরা কি করতে পারি অন্তরে আমরা সংগঠনই বা আমরা কতটুকু কাজে লাগতে পারি এবং নিত্যনতুন প্রকল্প হাতে নিয়ে আমাদের নারী ও শিশু কিভাবে ঝরে পড়া রোধ করতে পারি এবং অবহেলিত নারীদেরকে নিয়ে উন্নত থেকে উন্নতর করতে পারি সেজন্য অন্তরে আমরা ফাউন্ডেশন এর সকল সদস্যদের উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

2
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x