Skip to content

কৃষিবনায়ন

কৃষিবনায়নের উপকারিতা: প্রকৃতি ও আয়ের সমন্বয়

কৃষিবনায়ন (Agroforestry) হলো এমন একটি পদ্ধতি যেখানে একই জমিতে ফসলের সঙ্গে গাছ লাগানো হয়। বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি ও পরিবেশের জন্য এটি একটি দারুণ সমাধান। এই পদ্ধতি কৃষকদের জন্য আয় বাড়ানোর পাশাপাশি মাটি, পানি ও জলবায়ু রক্ষায় সাহায্য করে। আসুন জেনে নিই কৃষিবনায়নের প্রধান উপকারিতা।

কৃষিবনায়নের উপকারিতা

  1. আয়ের বৈচিত্র্য:
    • কৃষিবনায়নে ফসল (যেমন, ধান, সবজি) এবং গাছ (যেমন, আম, কাঁঠাল) একসঙ্গে চাষ করা যায়। ফসল থেকে স্বল্পমেয়াদি আয় এবং গাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদি আয় পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, একটি আম গাছ ৫-৭ বছর পর বছরে ৫০০০-১০,০০০ টাকার ফল দিতে পারে।
  2. মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি:
    • গাছের পাতা ঝরে মাটিতে জৈব পদার্থ যোগ করে, যা প্রাকৃতিক সার হিসেবে কাজ করে। শিম বা তেঁতুলের মতো গাছ মাটিতে নাইট্রোজেন যোগ করে ফসলের উৎপাদন বাড়ায়।
  3. পরিবেশ রক্ষা:
    • গাছ মাটির ক্ষয় রোধ করে, বিশেষ করে বাংলাদেশের বন্যাপ্রবণ এলাকায়। এটি কার্বন শোষণ করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমায়।
    • গাছের ছায়া গরমে ফসলকে রক্ষা করে এবং পাখি-প্রজাপতির জন্য আশ্রয় দেয়।
  4. পানি সংরক্ষণ:
    • গাছের শিকড় মাটিতে পানি ধরে রাখে, যা শুষ্ক মৌসুমে ফসলের জন্য উপকারী। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় এটি লবণাক্ততা কমাতেও সাহায্য করে।
  5. জ্বালানি ও কাঠের উৎস:
    • গাছ থেকে কাঠ, ডাল বা ফল পাওয়া যায়, যা বিক্রি করা যায় বা বাড়িতে ব্যবহার করা যায়। যেমন, শিশু গাছের কাঠ বছরে ১০-১৫ হাজার টাকার বাজার মূল্য তৈরি করতে পারে।
  6. জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধি:
    • গাছের সঙ্গে মাছ চাষ বা মুরগি পালন করলে একই জমি থেকে একাধিক উৎপাদন পাওয়া যায়। এটি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।

বাংলাদেশে কৃষিবনায়নের সম্ভাবনা

  • অর্থনৈতিক সুবিধা: বাংলাদেশে ফলের গাছ (যেমন, পেয়ারা, কলা) ও কাঠের গাছ (যেমন, মেহগনি) চাষ করে অনেক কৃষক বছরে ৫০,০০০ টাকার বেশি আয় করছেন।
  • জলবায়ু সুরক্ষা: উপকূলীয় এলাকায় নারিকেল বা সুপারি গাছ লাগানো বন্যা ও লবণাক্ততার বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক বাধা তৈরি করে।
  • সরকারি সহায়তা: বাংলাদেশ সরকারের বন বিভাগ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে বিনামূল্যে চারা ও প্রশিক্ষণ পাওয়া যায়।

কীভাবে শুরু করবেন?

  1. জমি পরিকল্পনা: বাড়ির পাশে বা জমির কিনারে গাছ লাগান, যাতে ফসলের জন্য জায়গা থাকে। যেমন, ধানের জমির পাশে কলা বা আম গাছ।
  2. স্থানীয় গাছ বেছে নিন: বাংলাদেশের জলবায়ুর জন্য উপযুক্ত গাছ (যেমন, নারিকেল, কাঁঠাল, শিশু) লাগান।
  3. মিশ্র চাষ: গাছের নিচে ছায়া-পছন্দ ফসল (যেমন, হলুদ, আদা) চাষ করুন।
  4. সময় দিন: গাছ থেকে ফল পেতে ৩-৫ বছর লাগতে পারে, তাই ধৈর্য ধরুন।

সাফল্যের গল্প

সিলেটের একজন কৃষক, রহিম উদ্দিন, তার ২ বিঘা জমিতে ধানের সঙ্গে সুপারি ও পেয়ারা গাছ লাগিয়েছেন। তিনি ধান থেকে বছরে ৩০,০০০ টাকা এবং গাছ থেকে ২০,০০০ টাকা আয় করেন। এখন তার পরিবারের জীবনযাত্রা অনেক উন্নত।

চ্যালেঞ্জ ও সমাধান

  • জায়গার অভাব: ছোট জমিতে গাছের সংখ্যা কম রাখুন এবং উল্লম্বভাবে চাষ করুন (যেমন, ঝুড়িতে ফলের গাছ)।
  • প্রাথমিক খরচ: সরকারি চারা বা এনজিওর সাহায্য নিন।
  • জ্ঞানের প্রয়োজন: স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিন।

শেষ কথা

কৃষিবনায়ন বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য একটি সোনার সুযোগ। এটি শুধু আয়ের পথ খোলে না, প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করে। আজই

Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Rose
Rose
21 days ago

বনায়ন এমন একটা বিষয়, দেশের প্রয়োজনে এটি বেশি বেশি করা দরকার। সবুজ উদ্ভিদ বায়ু থেকে যেমন দুষিত CO2 শোষণ করে নেয়, তেমনি আবার বায়ুমণ্ডলে O2 ত্যাগের মাধ্যমে মানুষ জাতির অভুত কল্যাণ করে যাচ্ছে। বন্ধু কে অনেক অনেক অনেক।

1
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x