বিজ্ঞান বিষয়ক রাসায়নিক পদার্থ ও যন্ত্রপাতির সহায়তায় কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি এবং বাজারজাতকরণ ই হচ্ছে উদ্যোক্তা। এখানে জিনিসপত্রের মানভেদে যদি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায় তবে ব্যাক্তি ও দেশ লাভবান হবে। মানুষের দৃষ্টি আকর্ষনের ক্ষেত্রে পন্যটির মানের সাথে তার রং, গন্ধ ও মোড়ক টি খুবই গুরুত্ব বহন করে। এমন কয়েকটি পন্য তৈরির উপায় নিচে বর্ননা করা হলো।
#১) গোলাপ 🌹 জল ::

সদ্যজাত ও প্রস্ফুটিত গোলাপ সংগ্রহ করে, পাপড়ি গুলো এমন ভাবে ছাড়িয়ে নিতে হবে যেন তাতে কোনো ময়লা না লাগে।কারন পাপড়িতে ময়লা লাগলে গোলাপ জলের গুনাগুণ কমে যায়। এবার পাপড়ি গুলো পরিষ্কার মাটির পাত্রে রেখে তাতে পরিস্কার বৃষ্টির পানি মেশাতে হবে। পাপড়ি গুলো পানিতে নিমজ্জিত ও ভাসমান অবস্থায় থাকবে। এরপর ঢাকনা দিয়ে ঢেকে পাত্রটি সাত-আট দিন সূর্যালোকে রেখে দিতে হবে। প্রথম তিন চার দিন তেমন কোন পরিবর্তন বোঝা যাবে না। চতুর্থ বা পঞ্চম দিনে পানির উপর তেল জাতীয় ফেনা ভাসতে থাকবে,যা মূলত আতরের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তারপর পরিস্কার তুলা দিয়ে ফেনা তুলে নিলে যে জল অবশিষ্ট থাকে তা মূলত গোলাপ জল। তবে ঐ গোলাপ 🌹 জলে পুনরায় একই ভাবে গোলাপ পাপড়ি ভিজিয়ে রাখলে যে গোলাপ জল পাওয়া যাবে সেটি হবে উৎকৃষ্ট মানের গোলাপ জল। তিক্ত স্বাদ যুক্ত গোলাপ জল শুস্ক ও তৈলাক্ততা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে এবং এটি মৃদু জীবানুনাষক। গোলাপ 🌹 জল তৈরির পর সুন্দর একটি প্লাস্টিক বা কাঁচের বোতলে ভর্তি করে, সুন্দর একটি লেবেল লাগালে বাজার জাত করনের উপযোগী হয়ে যায়।
২) ট্যালকম পাউডার :: ট্যালকম পাউডার সাধারণত গরমকালে আদ্রতা,ঘাম ও ঘামাচি হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়।এ পাউডার তৈরির প্রধান উপাদান হলো ট্যালক। নিম্নে ট্যালকম পাউডার তৈরির একটি ফর্মুলা দেওয়া হলো।
উপাদানের নাম———————শতকরা পরিমাণ
১)ট্যালক—————————৬০ভাগ
২)ZnO—————————-১০ভাগ
৩)CaCO3 ———————–১০ভাগ
৪)MgCO3 ——————–১৮ভাগ
৫) স্টার্চ ———————-২ভাগ
৬) মেন্থল ও সুগন্ধি –প্রয়োজন মত।
পদ্ধতি :: প্রথমে সবগুলো পদার্থ পাউডার মিক্সিং মেশিনে নিয়ে ভালো ভাবে গুঁড়া করে নিতে হবে।এরপর ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। অতঃপর স্প্রে করে সুগন্ধি পাউডারে মিশিয়ে মিশ্রণকে ওলট পালট করে ছেঁকে নিতে হবে।এর ফলে সুগন্ধি সুষম ভাবে সব যায়গায় ভালোভাবে মিশে যাবে। পাউডারে জৈব এবং অজৈব উভয় ধরণের রং ব্যবহার করা যায় । ঘামাচি রোধক পাউডার তৈরির ক্ষেত্রে চন্দন কাঠের নির্যাস ব্যবহার করা হয়। মেন্থল ব্যবহার করে আইচ কুল পাউডার তৈরি করা যায়। সবশেষে প্যাকেট বা বোতল জাত এবং লেবেলিঙ্ করে বাজার জাত করা হয়।

কোল্ড ক্রিম :: কোল্ড ক্রিম হচ্ছে পানি এবং তেল অথবা চর্বি মিশ্রিত এক ধরনের ইমালসন।এ ক্ষেত্রে তেলের পরিমাণ বেশি, পানির পরিমাণ কম।
কোল্ড ক্রিমের উপাদান :: পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কোল্ডক্রিম বিভিন্ন ফর্মুলায় উৎপাদিত হচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত গবেষণা হচ্ছে এর মান উন্নয়নের জন্য। কোল্ড ক্রিমের মূল উপাদান তেল ( প্যারাফিন) ,মোম ও পানি।কোল্ড ক্রিমে লুব্রিকেটিঙ এজেন্ট হিসেবে তরল প্যারাফিন ব্যবহার করা হয়।কোল্ডক্রিমে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য বোরাক্স ব্যবহার করা হয়।
#ফর্মুলা নিম্নরূপ ::—
উপাদান ——————————– পরিমাণ
১)মিনারেল অয়েল প্যারাফিন ——-৫৪গ্রাম
২) হোয়াইট ওয়াক্স ———————-১৮গ্রাম
৩)অ্যবস্পর্শান বেস ——————–৫.৫গ্রাম
৪)বোরাক্স ——————————–১ গ্রাম
৫) পানি ———————————- ২১ গ্রাম
৬) সুগন্ধি ——————————–৫ গ্রাম
প্রস্তুত প্রণালী :: —- কোল্ডক্রিম তৈরিতে ব্যবহৃত প্যারাফিনের আপেক্ষিক গুরুত্ব ০.৮৬ হতে হবে।এ ক্রিম তৈরিতে ওয়াটার জ্যাকেট মিক্সিং মেশিন ব্যবহার করা হয়। মিক্সিং মেশিনে উত্তাপে প্রথমে হোয়াইট ওয়াক্স গলাতে হয়।গলিত ওয়াক্সে ল্যানোলিন ও প্যারাফিন লিকুইডে পানি মিশ্রিত বোরাক্স মিশ্রনে ঢেলে দিতে হবে।এর পর মেশিন চালাতে হবে। ঠান্ডা হলে জিরেনিওয়াল ও ফিনাইল ইথাইল ইথার মিশিয়ে পুনরায় মেশিন চালাতে হবে। এতে সুগন্ধি ক্রিমে ভালভাবে মিশে যাবে। এভাবে কোল্ডক্রিম তৈরির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে থাকে। সবশেষে প্যাকেজিং করে বাজারজাত করতে হবে।
আফটার শেভ::-আফটার শেভ মূলত পুরুষদের ব্যবহৃত প্রসাধনী সামগ্রী।শেভ করার পর ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক মেরামত করার জন্য এবং একটা প্রশান্তিময় অনুভূতির জন্য আফটার শেভ ব্যবহার করা হয়। এটি জেল বা লোশন বা ক্রিম হিসেবে পাওয়া যায়। আফটার শেভ ক্রিমের PH –মান –৫.৫ ।
আফটারশেভ ক্রিমের ফর্মুলা::—
রাসায়নিক উপাদান —— শতকরা পরিমাণ
১)ইথানল —————————–৩০ভাগ
২)সরবিটাল ————————–২.৫ভাগ
৩) পারফিউম ———————–০.৫ভাগ
৪) মেন্থল —————-+—-০.১ভাগ
৫)বরিক এসিড ———————২.০ গ্রাম
৬) পানি ——————————-৪৪.৯গ্রাম

প্রস্তুত প্রণালী::—-পানি বাদে সব গুলো উপকরণ ভালো ভাবে মিশাতে হবে, এরপরে পানি মিশিয়ে মিশ্রণকে পাতলা করে নিতে হবে।এখন মিশ্রনটিকে ভালো ভাবে নাড়াতে হবে,যেন সবগুলো উপাদান সুষম ভাবে মিশে যায়।সব উপাদান মেশানোর পর কিছুক্ষণ মিশ্রনটিকে স্হির ভাবে রেখে দিতে হবে। এবার মিশ্রনটিকে ছেঁকে নিলে স্বচ্ছ নির্মল মিশ্রন পাওয়া যাবে। যদি আফটার শেভ বর্নযুক্ত করার প্রয়োজন হয় তাহলে পরিশেষে চাপ যোগে কাঙ্ক্ষিত রং মেশাতে হবে। অতঃপর প্যাকেজিং ও লেবেলিঙ করলেই কাজ শেষ।
টয়লেটে ক্লিনার:: —
টয়লেটের কমোড বা প্যান সাধারণত সিরামিকের তৈরি হয়ে থাকে। তাই এ ক্ষেত্রে শক্তিশালী ক্ষয়কারক পদার্থ, তীব্র এসিড বা তীব্র ক্ষারক করলেও কমোড বা প্যানের কোন ক্ষতি হয় না। নিচে একটি টয়লেট ক্লিনার প্রস্তুতির ফর্মুলা দেওয়া হলো।
রাসায়নিক উপাদান ————–শতকরা পরিমাণ
১)কষ্টিক সোডা ——————–১২ ভাগ
২) ক্যালসিয়াম ক্লোরহাইপোক্লোরাইড—১৭.০৫ ভাগ
৩) সোডিয়াম লরাইল সালফেট —–১০.০৭ভাগ
৪)ফেনল ———————————২.৩ ভাগ
৫) রং ———————————-১.১৫ ভাগ
৬) পানি —————————–৫৬.৮ ভাগ
টয়লেট ক্লিনার প্রস্তুতির জন্য প্রথমে একটি পরিস্কার প্লাস্টিকের বোতলে পানি নিয়ে ক্যালসিয়াম ক্লোরহাইপক্লোরাইড এবং রং বাদে বাকি উপাদান গুলো মিশাতে হবে,যেন উপাদান গুলো ভালো ভাবে মিশে যায়। সেজন্য হালকাভাবে নাড়তে হবে।অত:পর মিশ্রনে ক্যালসিয়াম ক্লোরহাইপক্লোরাইড যোগ করে রং মিশালেই কাঙ্ক্ষিত টয়লেট ক্লিনার তৈরি হয়ে যায়।
এরপর সুন্দর লেবেলিঙ করে প্যাকেট এবং বাজার জাত করলেই কাজ শেষ।
উৎপন্ন পন্য গুলো ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষনের ক্ষেত্রে এদের মোড়ক গুলো ভূমিকা রাখে এবং অধিকতর ব্যাবসা সফলতা অর্জন করার জন্য অনলাইন প্রচারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। বন্ধুরা তোমাদের সুচিন্তিত আরো সুন্দর মতামতের অপেক্ষায় রইলাম। সবাই ভালো থেকো।